স্থির চিন্তাধারার অনেক মানুষ ভাবে যে পৃথিবীর পরিবর্তন দরকার, তাদের নয়৷ তারা ভাবে যে আরাে ভালাে চাকরি, ঘর বা সঙ্গী তাদের পাওনা ছিল৷ পৃথিবীর উচিত ছিল তাদের বিশেষ গুণকে চিনে নেয়া ও সেইভাবে মূল্য দেয়া৷ আসুন, পরবর্তী সমস্যার দিকে যাওয়া যাক আর নিজেকে সেই পরিস্থিতিতে কল্পনা করুন৷
আরো পড়ুনঃ- নিজেকে জানার জন্য আত্মা বিশ্লেষণ মূলক প্রশ্ন
পরবর্তী সমস্যা: ভাবুন, “আমি এখানে, এত ছােট কাজ করি! এটি অন্যায়৷ আমার মত মেধা নিয়ে এই কাজ করা উচিত নয়৷ আমার উচিত বড়দের সাথে থাকা, চমৎকার জীবন উপভােগ করা৷” আপনার বস মনে করেন যে আপনার আচরণ ভালাে নয়৷ যখন দায়িত্ববান কারো প্রয়ােজন পড়ে, তিনি আপনার কথা ভাবে না৷ প্রমােশনের বিষয়েও তিনি আপনার নাম মনে করেন না৷
স্থির চিন্তাধারার প্রতিক্রিয়া: আপনি তিক্তভাবে বলেন, “সে আমাকে হুমকি মনে করে৷” স্থির চিন্তাধারা আপনাকে বলে যে আপনাকে ব্যবসার উপরের স্তরে রাখা উচিত৷ আপনার মানসিকতা অনুযায়ী আপনার প্রতিভা মানুষের দেখা উচিত ও সম্মান করা উচিত৷ যেহেতু তারা করেনি, এটি ন্যায্য নয়৷ আপনি কেন বদলাবেন?
আপনি কেবল আপনার অধিকার চান৷ কিন্তু নিজেকে পরিপক্ক চিন্তাধারায় স্থাপন করলে নতুন কি ভাববেন আর কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন? আর এই নতুন ভাবনার উপর আপনি কিভাবে কাজ করবেন? বেশ, আপনি আরাে পরিশ্রম করতে পারেন ও অন্যদের সাহায্য করতে পারেন৷ নিজের অবস্থান নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আপনি ব্যবসায় আরাে সময় দিতে পারেন৷ আসুন দেখা যাক ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়৷
পরিপক্ক চিন্তাধারার পদক্ষেপ: আসুন প্রথমে পরিষ্কার হয়ে নিই৷ অনেকদিন ধরে সেরা হওয়ার আশা ত্যাগ করার চিন্তাটা মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে৷ আপনি সাধারণ, গড়পড়তা মানুষ হতে চান না৷ যাদেরকে আপনি ছােট করে দেখেন, তাদের চেয়ে বেশি মূল্যবান হতে না পারলে কিভাবে আপনার ভাল লাগবে? আপনি এই ভাবনা দিয়ে শুরু করুন যে কিছু মানুষ সংকল্প ও চেষ্টার কারণে স্বতন্ত্র থাকে৷
আরো পড়ুনঃ- সাতটি ইতিবাচক ও নেতিবাচক আবেগ
একটু একটু করে চেষ্টা বাড়াতে থাকুন আর দেখুন যে সম্মানও কিভাবে বেড়ে যাচ্ছে৷ যদিও ধীরে ধীরে আপনি মেনে নিচ্ছেন যে চেষ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটা মানতে পারছেন না যে এর কোন নিশ্চয়তা নেই৷ আপনি কাজ করছেন, তার ফল পাচ্ছেন না, এটা আসলেই ন্যায়সঙ্গত নয়৷ অর্থাৎ আপনি শ্রম দিচ্ছেন আর প্রমােশন পাচ্ছে অন্য কেউ৷ অনৈতিক! আপনি চেষ্টা করার ও শিখতে চাওয়ার অনেক আগে থেকেই এটি হয়ে আসছে৷
কর্পোরেট সিড়ির নীচে থাকাটা অপমানজনক মনে করার চেয়ে বরং অনেক কিছু শিখে নিন, যেটা উপরে যাওয়ার জন্য প্রয়ােজন হয়৷ কোম্পানীর খুঁটিনাটি জানা থাকলে পরবর্তীতে বেশ বড় সুযােগ পাওয়া যায়৷ পরিপক্ক চিন্তাধারার সেরা সিইও'রা তাদের কোম্পানীর আগাগােড়া সমস্ত কিছু জানে৷ সহকর্মীর সাথে আলাপ করাকে সময় নষ্ট না ভেবে সম্পর্ক গড়ে তুলুন৷ এটি সম্ভষ্টির একটি নতুন সূত্র হতে পারে৷ বলতে পারেন যে বিল মারে ও তার গ্রাউণ্ডগ ডে’র অভিজ্ঞতার পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন৷
যেহেতু আপনি অনেক বেশি পরিপক্ক চিন্তাধারার মানুষ হয়ে উঠছেন, আপনি দেখে অবাক হবেন যে মানুষ আপনাকে কিভাবে সাহায্য করছে, সমর্থন দিচ্ছে৷ আপনার পাওনা দিতে তারা আর অস্বীকার করছে না৷ তারা নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্যের দিকে একযােগে এগিয়ে যাচ্ছে৷ বিষয়টি দারুণ, আপনি অন্যান্য মানুষদের আচরণ বদলাতে চেয়েছেন আর পেরেছেনও৷
পরিশেষে স্থির চিন্তাধারায় অনেক মানুষ বুঝতে পারে যে তাদের বিশেষত্বের আবরণ নিজেকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও মূল্যবান রাখার একটি বর্ম বিশেষ৷ এটি প্রথমদিকে তাদেরকে রক্ষা করলেও পরবর্তীতে তাদের বৃদ্ধিকে বাধা দিয়েছে, আত্মপরাজয়ে বাধ্য করেছে এবং সন্তোষজনক, পারস্পরিক স্থাপনে বাধা দিয়েছে৷
আরো পড়ুনঃ- কী করে সফল ব্যাক্তি হওয়া যায়
স্থির চিন্তাধারার প্রতিক্রিয়া: আপনি সবসময় ডিভাের্সী মানুষদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন৷ এখন আপনি নিজে তাদের একজন৷ আপনি নিজের সব সম্মান হারিয়েছেন৷ আপনার সঙ্গী, যে আপনাকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনে, সে আর আপনাকে চায় না৷ অনেক দিন ধরে আপনি নিজেকে এটাও বুঝতে পারেননি যে আপনার সন্তানেরাও আপনাকে ছাড়া ভাল থাকে৷ আপনার গুরুত্ব আদৌ আছে কি না, সেটা বুঝতেও আপনার সময় লেগেছে৷
এখন সবচেয়ে কঠিন অংশটি হল, যদিও আপনি আগের চেয়ে কিছুটা ভাল বোধ করছেন, এখনও স্থির চিন্তাধারায় রয়ে গেছেন৷ আপনি এখন পুরাে জীবনটাকে বিচার করতে শুরু করেছেন৷ ভালাে সবকিছুর জন্য আপনার ভেতরের কণ্ঠস্বর বলছে; আমি হয়ত সবকিছু মিলিয়ে ঠিক আছি৷ খারাপ যা কিছু ঘটেছে, তার জন্য আপনার কণ্ঠস্বর বলছে, আমার সঙ্গী ঠিক ছিল৷
যেকোন নতুন মানুষকেই আপনি এখন বিচার করা শুরু করেছেন৷ পরিপক্ক চিন্তাধারার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আপনার বিয়ে ও জীবন সম্পর্কে আপনি পুনরায় আর কি ভাবতে পারেন? আপনি আপনার স্ত্রীর কথা শুনতে ভয় পেতেন৷ কেন? আপনি কি করতে পারতেন? আপনার এখন কি করা উচিত?
পরিপক্ক চিন্তাধারার পদক্ষেপ: প্রথমত যে বিয়েকে আপনি বেশ ভাল মনে করেছেন, সেটা একদিনে খারাপ হয়নি বা সবসময় খারাপ ছিল না৷ পরিচর্যার অভাবে এটি ধীরে ধীরে খারাপ হয়েছে৷ আপনার ভাবা দরকার যে আপনি ও আপনার সঙ্গী এই সম্পর্কে কতটুকু অবদান রেখেছেন৷ এবং আরাে ঘনিষ্ঠ থাকার ও শেয়ার করার অনুরােধ আপনি কেন রাখতে পারেন নি৷
বিশ্লেষণ করতে গিয়ে স্থির চিন্তাধারায় আপনি টের পেলেন যে সঙ্গীর অনুরােধকে সমালােচনার দৃষ্টিতে বিচার করে আপনি তার গুরুত্ব দেননি৷ আপনি আরাে টের পেলেন যে কিছু ক্ষেত্রে আপনার ভয় হচ্ছিল যে সঙ্গীর অনুরােধ আপনি হয়ত রাখতে পারবেন না৷ কাজেই বিষয়গুলাে সঙ্গীর সাথে আলােচনা করার পরিবর্তে আপনি এই ভেবে চুপ থাকলেন যে সময়ের সাথে এর আর গুরুত্ব থাকবে না৷
আরো পড়ুনঃ- আমরা কেন ঘুমাই
যখন কোন সম্পর্কে তিক্ততা আসে, নিজেদেরকে বিচার না করে এইসব বিষয়ের গভীরে যেতে হয় যাতে ভয়াকে অতিক্রম করে, যােগাযােগের পরিমাণ বাড়িয়ে আমরা ভবিষ্যতে ভালাে একটি সম্পর্ক তৈরি ও রক্ষা করতে পারি৷ পরিপক্ক চিন্তাধারা মানুষকে বিচার বা তিক্ততা নয়, সমঝােতা ও যােগ্যতার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে৷ কেউ কি আপনাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে যেটা আপনি শুনছেন না? পরিপক্ক চিন্তাধারা নিয়ে অগ্রসর হন ও আবার শুনুন৷
Thanks to comment Jibon Somossa official blog. Stay with us for more content. Follow us to Facebook. www.facebook.com/jibonsomossa.blog